দেবশ্রী-এক স্বর্গীয় অনুভূতি: পর্ব ১৬: খণ্ড: ৪

🔗 Original Chapter Link: https://chotimela.com/jhal-moshla/debosree-ek-shorgio-onubhuti-16-4/

🕰️ Posted on Thu Jan 06 2022 by ✍️ Jupiter10 (মৃত তারার গল্প।) (Profile)

📂 Category:
📖 1487 words / 7 min read
🏷️ Tags:

Parent
দেখতে দেখতে সেই প্রতীক্ষিত দিনটি এসে পড়লো। বিকেল চারটে পঞ্চান্নই ফ্লাইট আছে আমাদের। আমরা তিন জন রেডি। শুধু মায়েরই একটু দেরি হচ্ছিলো। মায়ের বেশ কিছুটা সময় পেরিয়ে গেলো তাঁর ড্রেসিং আয়নার সামনে। আমি আর বাবা নীচে অপেক্ষা করছিলাম। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে একটু বিরক্ত হচ্ছিলাম বৈকি। একটু পরেই গাড়ি এসে পড়বে। গাড়িটা প্রথমে তিন্নি দের বাড়ি যাবে। সেখান থেকে তাদের তুলে নিয়ে আমাদের বাড়ি আসবে। ঘড়িতে সময় দেখলাম, প্রায় আধ ঘণ্টা বাকী আছে এখনও। কিন্তু মায়ের দেরি দেখে বাবা আমাদের খুবই তাড়া দিচ্ছিল। আমাদের ব্যাগপত্র সব রেডি। জুতও পরে নেওয়া হয়েছে। দেখলাম বাবা ধৈর্য্য না রাখতে পেরে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেলেন। মায়ের নাম ধরে জোরে জোরে ডাকছিলেন। তখনই মা দরজা দিয়ে বেরিয়ে এলো। মাকে বেশ সুন্দরী লাগছিল।বাবা কিনে দেওয়া লং গোলাপি সালোয়ারটা পরেছে। বাহ তুমি খুবই সুন্দরী মামনি। মনে মনে তার প্রশংসা করলাম। সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে মা আমার দিকে তাকাল, “কেমন লাগছে রে? নতুন ড্রেসটা পরে?” “you’re so gorgeous ma! সে আবার বলতে। খুবই সুন্দরী লাগছে তোমাকে!” মায়ের মুখে উজ্জ্বল হাসি। বাবা ওই দিকে তাড়াহুড়ো করে মোবাইল বের করে সৌমিত্র কাকুকে ফোন করল, “এই কতদূর তোরা? বেরিয়ে গেছিস?” তড়িঘড়ি ফোনটা রেখে বাবা আমাকে বলল, “এই বাবু! ব্যাগপত্র গুলোকে বাইরে নিয়ে গিয়ে গেটের সামনে রেখে আয়। ওরা বেরিয়ে পড়েছে। এই ঢুকল বোধয়”। বাবার কথা মা তোয়াক্কা করলো না, “এই বস তো বাবু। ওরা এলেই ব্যাগ গুলো নিয়ে যাবি। এতো তাড়াহুড়োর প্রয়োজন নেই”। মায়ের কথা শুনে বাবা নিরুপায় হয়ে নিজেই ব্যাগ গুলোকে নিয়ে বাইরে বেরত লাগলেন। ড্রইং রুম বেরিয়েছন কি তাঁর মোবাইল ফোনটা আবার বেজে উঠল। বাবা ফোনটা তুলে কথা বলতে লাগলাম। দেখলাম বাবা একটু সিরিয়াস। তাঁর মধ্যে আর সেই তাড়া ভাবটা নেই। মাও জিজ্ঞাসু মন নিয়ে তাঁর দিকে গেলো, “কে ফোন করেছে গো?” বাবা মায়ের দিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিলো, “ তোমার মা ফোন করেছেন”। মা একটু আশ্চর্যচকিত হয়ে, “হ্যালো হ্যাঁ মা বল”! এদিকে গাড়িটাও এমন মুহূর্তে আমাদের বাড়ির সামনে হেসে হর্ন বাজাল। আমি সেদিকে চলে গেলাম। মহিন্দ্রা জাইল গাড়ি। তিন্নির বাবা আর ড্রাইভার গাড়ি থেকে নেমে আমাদের জিনিসপত্র গুলো গাড়ির পেছন দিকে রাখছিল। তিন্নি আর মঞ্জু কাকিমা গাড়ির মাঝের সিটে বসেছিল। তিন্নি আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। আর মঞ্জু কাকিমার নজর মায়ের দিকে ছিল। তাঁর মুখে অস্পষ্ট হাসি। মঞ্জু কাকিমাকে দেখে তিন্নির সঙ্গে সেদিনের ফোনের কথা গুলো মনে পড়ে গেলো আর বুকটা একটু ধড়াস করে কেঁপে উঠল। ফলে আমি আর তাঁর দিকে তাকাতে পারলাম না। ড্রাইভারের পাশের সিটে বসে পড়লাম। মা ফোনটা রেখে আমাদের দিকে এগিয়ে এলো।গাড়ির মাঝখানের সিটের ডান পাশে জানালার ধারে মঞ্জু কাকিমা, মাঝে তিন্নি আর বাম দিকে মা উঠে বসল। বাবা আর সৌমিত্র কাকু গাড়িতে ব্যাগগুলো রাখার পর আবার ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল। আমি পেছন ফিরে মায়ের মুখের দিকে তাকালাম। মা আর মঞ্জু কাকিমা একে অপরকে কুশল বিনিময় করলেন। মাকে উদাসীন লাগছিলো কিছুটা। জিজ্ঞেস করলাম, “ কি হয়েছে মা? দিদা কি বলছিলেন?” মা বলল, “কি জানি? তোর দিদা তো এই সময় ফোন করেন না”। “দাদাই ভালো আছেন তো?” “হ্যাঁ আমি জিজ্ঞেস করলাম বাবু। তিনি বললেন দাদাই ভালোই আছেন”। “তাহলে তুমি এমন মন খারাপ করে রয়েছ কেন?” “তোর দিদা কিছু বলতে চাইছিল,জানিস! আমরা বেড়াতে যাবো বললাম দিয়ে তোর দিদা চেপে গেলেন”। “ওহ! ওটা কিছু নয় মা। দিদা হয়তো তোমার সঙ্গে গপ্প জোড়াতেন। তুমি আমরা যাচ্ছি বলে, যাত্রা নষ্ট করতে চাননা”। “হ্যাঁ তাইই হবে”। “কি হয়েছে দেবও?” ,মঞ্জু কাকিমা মাকে প্রশ্ন করলেন। মঞ্জু কাকিমার কথা শুনে মা একটু গলা ঝেড়ে চাপা হাসি দিয়ে বলল, “ আরে মা ফোন করেছিলো একটু আগে। কিছু হয়তো বলতে চাইছিল। আমরা ট্যুরে যাচ্ছি বলে কথা বাড়াল না”। “তোমার বাবা ভালো আছেন তো?” “হ্যাঁ মা তো তাই বলল। বাবা এখন ভালোই আছেন”। ওদের কথার মধ্যেই আমার বাবা আর তিন্নির বাবা বাইরে বেরিয়ে এলেন। মা বাবার দিকে তাকিয়ে, “ঘরের দরজা গুলো ঠিক মতো লাগিয়েছ তো?” বাবা আর সৌমিত্র কাকু গাড়ির পেছন সিটে উঠে বসলেন। বাবা বললেন, “হ্যাঁ সব দরজা ঠিক মতো লাগানো হয়ে গেছে। ফ্রিজ, গ্যাস সব কিছু চেক করে নিলাম”। “সব ঠিক আছে তো?” “হ্যাঁ! সব ঠিক আছে”। তাদের কথার মধ্যেই ড্রাইভার গাড়ি ছেড়ে দিলেন। দমদম এয়ারপোর্ট। ইন্দিগো এয়ার লাইন্স। বিকেল চারটে পঞ্চান্ন। আমাদের গন্তব্য স্থল ভাসকো-ডা-গামা এয়ার পোর্ট। সময় লাগবে দুঘণ্টা চল্লিশ মিনিট। দমদম এয়ারপোর্ট আসতে সময় লেগে গেলো প্রায় তিরিশ মিনিট। গাড়িতে থাকার সময় একটা জিনিস লক্ষ্য করিনি। মঞ্জু কাকিমা কে আমি তখন সেভাবে তাকিয়ে দেখার সময় পায়নি। আর তিনিও আমার সঙ্গে সেদিনের পর থেকে তেমন আর কথা বলেন না। কেমন একটা রাগি ভঙ্গীতে চেয়ে থাকেন। আমিও নিজের থেকে আর তাঁর সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করি না। কিন্তু এখন যখন গাড়ি থেকে নেমে আমি ব্যাগপত্র নিয়ে যাবার জন্য ট্রলি গুলো নিয়ে এলাম আর একটা একটা করে ব্যাগ ট্রলির উপর রাখছিলাম। তিনিও আমার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলাম, “ভালো আছেন কাকিমা?” তিনি একটা গম্ভীরভাব প্রকট করে, “হুম”। বলে আমার সামনে থেকে সরে গেলেন। আমি একটু আশ্চর্য হয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে রইলাম। মাও তখন আমার সামনে এলো। তাঁর দিকে তাকিয়ে বলল, “দেখলি? একেই বলে **ল চাল!” আমি ভ্রু কুঁচকালাম, “কি হয়েছে মা?” “সেদিন জোর করে আমায় দুটো চুড়িদার কেনা করাল! আর নিজেই কেমন শাড়ি পরে এসেছে দেখ”! হ্যাঁ সত্যিই তো আমি খেয়াল করিনি। মঞ্জু কাকিমা টিল ব্লু কালারের একখানা শাড়ি পড়েছেন। সত্যিই তিনি যখন কিনেই ছিলেন তখন তাঁর পরে আসা উচিৎ ছিল। আমার মায়ের মন এভাবে ভেঙ্গে দেওয়া তাঁর উচিৎ হয়নি। আমি মাকে সান্ত্বনা দিলাম, “কি করবে মা! সবাই তো আর তোমার মতো সুন্দরী হয়না। তিনি হয়তো বাড়ি গিয়ে ট্রাই করেছিলেন। সেই পোশাকে তাঁকে মানায়নি। তাই পরেনি”। মা বলল, “ হ্যাঁ সেটাই দেখছি। বরের খসাতে তাঁর বাদ সাধে না! তোর বাপের মতো লোকের পাল্লায় পড়তো, তখন বুঝত। এক একটা পয়সার কি মূল্য”। আমি গলা ঝাঁকড়ালাম, “ইয়ে মানে মা। চলো চলো। আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে”। এয়ারপোর্টে তিন্নি আর মঞ্জু কাকিমা একসঙ্গে ছিল। এদিকে বাবা আর সৌমিত্র কাকু। আর ওপর দিকে আমি আর মা। তিন্নিকে ব্লু জিন্স আর পিঙ্ক টপে বেশ ভালোই লাগছিলো। টার্মিনালের মধ্যে চেয়ারে আমি আর মা পাশাপাশি বসলাম।তার অপর পাশে তিন্নি আর ওর মা। বাবা আর কাকু ব্যাগ গুলোকে চেকিং হুইলের মধ্যে রেখে দিলেন। ওগুলো চেক হয়ে এয়ার বাসের মধ্যে চলে যাবে। মঞ্জু কাকিমা আমার মায়ের দিকে তাকালেন। বড়বড় চোখ করে, “ ওহ মা দেবও! তখন খেয়ালই করিনি। এই পোশাক টাই তো সেবারে নিয়েছিলে? তোমাকে তো ভীষণ সুন্দরী লাগছে। ভালো মানিয়েছে তোমার গায়ে!” মা’ও তাঁর দিকে তাকিয়ে হাসল, “হ্যাঁ ওই আরকি। সেবারে নিতে চাইছিলাম না বল?” “হ্যাঁ সেটাই তো। তুমি না নিলে বড্ড ভুল করতে”। “তুমিও তো নিলে? কই পরলে নাতো?” “আরে এখন পরা হলনা। তবে সঙ্গে নিয়েছি! সেখানে গিয়ে পরবো”। ওদের কথার মধ্যেই আমরা একটু একটু করে রানওয়ের দিকে এগিয়ে এগোতে লাগলাম। ফ্লাইটের ভেতরে বাম দিকে আমি মা আর বাবা। অপর দিকে তিন্নি ওর বাবা এবং মা। ফ্লাইটের মধ্যে জানালার বাইরে উপর থেকে মেঘ মিশ্রিত শহর কলকাতাকে দেখতে ভালোই লাগছিলো। আমি আর মা সেগুলো দেখতে দেখতে হারিয়ে যাচ্ছিলাম এক অজানা গন্তব্য-এর দিকে। আস্তে আস্তে সন্ধ্যা থেকে অন্ধকার নেমে এলো। জানালা দিয়ে আর কিছু দেখতে পাচ্ছিলাম না। এমন মুহূর্তে একজন এয়ার হোস্তেস চকোলেট পরিবেশন করে দিলেন। আমি একগাদা চকোলেট নিয়ে নেওয়াতে তিনি আমার দিকে বড়বড় চোখ করে তাকালেন। “উফ কি করছিস বাবু!”, আমি মায়ের কথায় আমল দিলাম না। গোয়া সম্বন্ধে আমার ধারণা অতটাই যতটা একজন গোয়া না যাওয়া মানুষের। বাবার কথা অনুযায়ী আমরা দক্ষিণ গোয়াতে উঠবো এবং সেখানেই পাঁচদিন থাকবো।হোটেলের মুখোমুখি তিনটে রুম নেওয়া হয়েছে। একটা তে বাবা মা থাকবে।একটা তে আমি একা। এবং অপর একটায় তিন্নিরা তিনজন।মা,বাবা এবং তিন্নি দের রুমটা পাশাপাশি। আমারটা তাদের বিপরীতে। মনে মনে ভাবছিলাম দক্ষিণ গোয়া মানে হয়তো সমুদ্র সৈকতের সন্নিকটে। হয়তো ফিরিঙ্গীদের আস্তানা ওইখানেই। আমি তো সারাক্ষণ সৈকতেই কাটাবো। সানগ্লাস চোখে দিয়ে বিকিনি সুন্দরীদের দেখে দেখে দিন পার করবো। ফ্লাইটের উইন্ডো শাটার ডাউন করে মায়ের দিকে ফিরে তাকালাম। মা বাবার সঙ্গে কথা বলছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে বিমান সেবিকা আমাদের জলখাবার দিয়ে গেলেন। আমি আর বাবা আমিষ নিলাম। মা নিরামিষ নিল। প্রায় দুঘণ্টা চল্লিশ মিনিট পর ফ্লাইট ভাসকো-ডা-গামা এয়ার পোর্টে টাচ ডাউন করলো। এয়ারপোর্টের বাইরে বাবার নাম দেওয়া সাইনবোর্ড ধরে একজন ক্যাব ড্রাইভার দাঁড়িয়ে ছিলেন। উনি আমাদের সবাই কে নিয়ে হোটেলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন। বাহ! হোটেলও খুবই সুন্দর। পাঁচ তারা বলা যায় না। তবে থ্রি স্টার বলা যায়।পাঁচ তলায়, কেয়ার টেকার রুম আনলক করে দিয়ে চাবি আমাদের হাতে দিয়ে চলে গেলেন। আমার রুম টা খুবই সুন্দর। দরজা দিয়ে ঢুকে বাম দিকে কিছু দূরে ডাইনিং টেবিল সঙ্গে দুটো কাঠের চেয়ার পাতা। তার ডান পাশে আড়াআড়ি বিছানা।বিছানার ডান কোণে দেওয়াল ঘেঁষা একটা ছোট্ট টেবিল। তার উপরে টেলি ফোন।বিপরীত দেওয়ালে টিভি সাঁটানো। তার বাম পাশে একটা কাঠের আলমারি। টিভির পাশে ডান দেওয়ালে বাথরুমের দরজা । এবং বিছানার বাম পাশে বিশাল বড় একটা জানালা। জানালার দিবারাত্রি কাঁচ সরালেই গোয়ার ঝলমলে আলোয় ভরা রাত্রি শহর। উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম কিছুই বোঝা যায়না এখন। কিছুক্ষণের মধ্যেই মা পোশাক বদলে নাইটি পরে আমার রুমে এসে দেখে গেলো আমার রুমে সবকিছু ঠিক আছে কি না? মা চলে যেতেই টিভি অন করে দিলাম। বহু আগে শুনেছিলাম নাকি এই সব আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ক্ষেত্র গুলের হোটেলে নাকি পর্ণের টিভি চ্যানেল থাকে। ওগুলোতে চব্বিশ ঘণ্টা পর্ণ চলে। কিন্তু প্রায় দুই তিনশো চ্যানেল বদলেও তেমন কিছুই দেখতে পেলাম না। সান্ত্বনা স্বরূপ ফ্যাশন টিভি টা খুঁজে পেলাম। বিকিনি পরে রাম্প ওয়াক করা মডেল দের চ্যানেল। আমাদের বাড়িতে বহুকাল আগে এই চ্যানেল ছিল। পরে তা ওধাও হয়ে যায়। যাইহোক কিছুক্ষণের মধ্যে প্রায় নয়টা বাজবে, মা আমায় ডেকে নিল রাতের খাবার সারার জন্য। খুশির খবর এখানেও ভাত পাওয়া যায়। রাতের খাবার সেরে আমি নিজের রুমে শুয়ে পড়লাম। ক্লান্ত লাগছিলো বেশ। মা এমনিতেই রাত জাগতে মানা করে দিয়েছে।
Parent